ঢাকা ০৮:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমের দাম নিয়ে হতাশ দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩ ৮০৪ বার পড়া হয়েছে

আমের কাঙিক্ষত দাম পাচ্ছেন না দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। আমচাষিদের অভিযোগ- প্রশাসনের অজ্ঞতার কারণে এবার তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। সঠিক সময়ে আম নামানোর ক্যালেন্ডার ঠিক করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর আমের মুকুল এসেছে বিভিন্ন সময়ে। বেশিরভাগ গাছেই তিনবার মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলের আম আগে পরিপক্ব হয়েছে। পরিপক্ব আম সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারার কারণে কাঙিক্ষত দাম পাচ্ছেন না আমচাষিরা।

দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ আমের মোকাম বসে যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলায়। এ বাজারে যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন বাগান থেকে আম আসে। এখান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ ক্যারেট আম দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এ মোকামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে আম সংগ্রহ করে থাকেন। বর্তমানে সপ্তাহে সাত দিন আমের বাজার বসছে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন আম বেচাকেনা হচ্ছে। আমের গুণগত মান ঠিক রাখতে আলাদা তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার আমে ফরমালিন ব্যবহার রোধে গণসচেতনতাসহ প্রচার-প্রচারণা চালানোও হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আমচাষি শাহজাহান আলী বলেন, এ বছর প্রশাসনের ক্যালেন্ডার নির্ধারণ ঠিক হয়নি। যে কারণে চাষিরা পরিপক্ব আম সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। বেশিরভাগ চাষির এ বছর প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

যশোরের শার্শার ঘোড়পাড়া এলাকার বাগান মালিক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এ বছর কোনো কোনো গাছে তিনবার মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলের কারণে আমও আগাম পরিপক্ব হচ্ছে, কিন্তু আমরা প্রশাসনের ক্যালেন্ডার মানতে গিয়ে ওই পরিপক্ব আম বাজারে তুলতে পারছি না। ফলে আম নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যে কারণে আমের দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

সিরাজ হোসেন নামে স্থানীয় এক আমচাষি বলেন, আমরা বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক থেকে ঋণ করে আম চাষ করেছি। কিস্তির জন্য প্রতিদিন বাড়িতে এনজিও আর ব্যাংকের লোকজন ভিড় করে। আমের ব্যবসায় লোকসান। এখন আমাদের বাড়ি ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় নেই।

নাভারনের আমচাষি সিরাজ শেখ বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আমার আমের বাগান আছে। প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরপর সার-কীটনাশকের দাম বেশি। এমন বাজার চলতে থাকলে চাষিরা না খেয়ে মরে যাবে।

এ বছর আম নামানোর ক্যালেন্ডার সঠিক সময়ে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ১০ মে থেকে আম নামানোর ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করেছে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসন। যশোরের প্রশাসন এখনো ক্যালেন্ডার ঠিক করতে পারেনি। যে কারণে চাষিরা সময় মতো তাদের গাছের পরিপক্ব আম বাজারজাত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে তারা কাঙিক্ষত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বেলতলা আম বাজারের আড়তদার আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, এ বছর আমের ফলন ভালো। সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা আমাদের কাছে আম নিয়ে আসছেন, তবে আমরা তাদের ভালো দাম দিতে পারছি না। কারণ এ বছর আমের আগাম ফলন এবং ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিল না থাকায় আমচাষিরা দাম পাচ্ছেন না। আমাদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

আমের দাম নিয়ে হতাশ দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা

আপডেট সময় : ০৬:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩

আমের কাঙিক্ষত দাম পাচ্ছেন না দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। আমচাষিদের অভিযোগ- প্রশাসনের অজ্ঞতার কারণে এবার তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। সঠিক সময়ে আম নামানোর ক্যালেন্ডার ঠিক করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর আমের মুকুল এসেছে বিভিন্ন সময়ে। বেশিরভাগ গাছেই তিনবার মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলের আম আগে পরিপক্ব হয়েছে। পরিপক্ব আম সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারার কারণে কাঙিক্ষত দাম পাচ্ছেন না আমচাষিরা।

দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ আমের মোকাম বসে যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলায়। এ বাজারে যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন বাগান থেকে আম আসে। এখান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ ক্যারেট আম দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এ মোকামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে আম সংগ্রহ করে থাকেন। বর্তমানে সপ্তাহে সাত দিন আমের বাজার বসছে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন আম বেচাকেনা হচ্ছে। আমের গুণগত মান ঠিক রাখতে আলাদা তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার আমে ফরমালিন ব্যবহার রোধে গণসচেতনতাসহ প্রচার-প্রচারণা চালানোও হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার আমচাষি শাহজাহান আলী বলেন, এ বছর প্রশাসনের ক্যালেন্ডার নির্ধারণ ঠিক হয়নি। যে কারণে চাষিরা পরিপক্ব আম সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। বেশিরভাগ চাষির এ বছর প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

যশোরের শার্শার ঘোড়পাড়া এলাকার বাগান মালিক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এ বছর কোনো কোনো গাছে তিনবার মুকুল এসেছে। আগাম মুকুলের কারণে আমও আগাম পরিপক্ব হচ্ছে, কিন্তু আমরা প্রশাসনের ক্যালেন্ডার মানতে গিয়ে ওই পরিপক্ব আম বাজারে তুলতে পারছি না। ফলে আম নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যে কারণে আমের দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

সিরাজ হোসেন নামে স্থানীয় এক আমচাষি বলেন, আমরা বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক থেকে ঋণ করে আম চাষ করেছি। কিস্তির জন্য প্রতিদিন বাড়িতে এনজিও আর ব্যাংকের লোকজন ভিড় করে। আমের ব্যবসায় লোকসান। এখন আমাদের বাড়ি ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় নেই।

নাভারনের আমচাষি সিরাজ শেখ বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আমার আমের বাগান আছে। প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরপর সার-কীটনাশকের দাম বেশি। এমন বাজার চলতে থাকলে চাষিরা না খেয়ে মরে যাবে।

এ বছর আম নামানোর ক্যালেন্ডার সঠিক সময়ে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ১০ মে থেকে আম নামানোর ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করেছে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসন। যশোরের প্রশাসন এখনো ক্যালেন্ডার ঠিক করতে পারেনি। যে কারণে চাষিরা সময় মতো তাদের গাছের পরিপক্ব আম বাজারজাত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে তারা কাঙিক্ষত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বেলতলা আম বাজারের আড়তদার আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, এ বছর আমের ফলন ভালো। সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা আমাদের কাছে আম নিয়ে আসছেন, তবে আমরা তাদের ভালো দাম দিতে পারছি না। কারণ এ বছর আমের আগাম ফলন এবং ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিল না থাকায় আমচাষিরা দাম পাচ্ছেন না। আমাদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।