ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লামায় খাল দখল, বর্ষায় জলাবদ্ধতা শুষ্ক মৌসুমে পানি শুণ্যতা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩ ২১ বার পড়া হয়েছে

বান্দরবানের লামা সরই ইউনিয়নে পুলাংয়ের খালটি দখল প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। খালের ওপর কয়েক মিটার পর পর বাঁধ নির্মাণ করায় বর্ষায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে কেল্লারছড়ার ৭টি গ্রামের নিচু জমি ডুবে যায়। লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিনের গ্রাম পুলাং নামক স্থান থেকে প্রাকৃতিক সৃষ্ট একটি খালের নাম পুলাংয়ের খাল। প্রায় ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘের খালটি ৭টি গ্রামের পানি নিষ্কাশন করে ডলুখালে পতিত হয়। এই ৭টি গ্রামের নিষ্কাশন খালটির প্রথম এক কিলোমিটার পরের অংশে টুইন্যাপাড়ায় প্রায় ৫ শো মিটার অংশ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মান করে দখল করে রেখেছেন কাজী ছোবহান নামের একজন। সরেজমিন দেখা যায়, সেখানে পুলাং খালের পাড়ে ছোবহানের পৈত্রিক জমি রয়েছে। ওই সুবাধে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলা পুটিবিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজী আঃ ছোবহান খালের উপর কয়েকটি বাঁধ নির্মান করেছেন। এর ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বর্ষায় গ্রামের অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি শুণ্যতা দেখা দেয়। থেকে থেকে বাঁধ দিয়ে খাল ভরাট করার ফলে অপর প্রান্তের ভূমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অন্য জনের ভূমিও আঃ ছোবহানের দখলে চলে আসে। আ: ছোবহানের এমন বে-আইনি কর্মকান্ডে পরিবেশদূষণের শিকার হচ্ছে গ্রামবাসীরা। সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিছ কোম্পানী জানান, খালের প্রবাহ রোধ করার ঘটনা সত্য। এই কাজটি তিনি অনেক আগে থেকে করে আসছে। সময় এসেছে এখন আইন প্রয়োগের। এ ব্যপারে কাজী আ: ছোবহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০০৮ সালে লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাকে খালে বাঁধ দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এ দিকে লামা ভূমি অফিস সূত্র জানান, এই ধরনের কোনো অনুমতি তারা কখনো দেন নাই, দিতে পারেনওনা। পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান অফিস জানান, এ সব ব্যপারে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও বা এসিল্যান্ড প্রাথমিক অভিযান চালিয়ে মামলা দিলে, সেই মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিবেন। এ বিষয় লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মোস্তফা জাবেদ কায়সার জানান, পরিবেশ ও জনস্বার্থ বিঘ্ন ঘটিয়ে যে কোন কাজই বে-আইনি। স্থানীয়দের অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডলু খালের সঙ্গে সংযোগ করে পুলাং খালের প্রাকৃতিক প্রবাহে স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সবাই। ২০০০ সালে প্রণীত ‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন’ অনুযায়ী নদী, খাল, বিল, দিঘি, ঝরনা বা জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ এলাকা এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে, এমন কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ সেগুলো ভরাট করা যাবে না। আইন অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় খাল-নদী রক্ষা করার কেউ নেই। যে যার ক্ষমতা অনুযায়ী খাল ও নদী ব্যবহার করছে। যাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে, তারা নদী ও খালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। পরিবেশ-প্রতিবেশ কিংবা সমাজের দশজনের ক্ষতির পরোয়া করছে না তারা। এই বে-আইনি কর্মকান্ড রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

লামায় খাল দখল, বর্ষায় জলাবদ্ধতা শুষ্ক মৌসুমে পানি শুণ্যতা

আপডেট সময় : ১১:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩

বান্দরবানের লামা সরই ইউনিয়নে পুলাংয়ের খালটি দখল প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। খালের ওপর কয়েক মিটার পর পর বাঁধ নির্মাণ করায় বর্ষায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে কেল্লারছড়ার ৭টি গ্রামের নিচু জমি ডুবে যায়। লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিনের গ্রাম পুলাং নামক স্থান থেকে প্রাকৃতিক সৃষ্ট একটি খালের নাম পুলাংয়ের খাল। প্রায় ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘের খালটি ৭টি গ্রামের পানি নিষ্কাশন করে ডলুখালে পতিত হয়। এই ৭টি গ্রামের নিষ্কাশন খালটির প্রথম এক কিলোমিটার পরের অংশে টুইন্যাপাড়ায় প্রায় ৫ শো মিটার অংশ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মান করে দখল করে রেখেছেন কাজী ছোবহান নামের একজন। সরেজমিন দেখা যায়, সেখানে পুলাং খালের পাড়ে ছোবহানের পৈত্রিক জমি রয়েছে। ওই সুবাধে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলা পুটিবিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা কাজী আঃ ছোবহান খালের উপর কয়েকটি বাঁধ নির্মান করেছেন। এর ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বর্ষায় গ্রামের অনেক এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি শুণ্যতা দেখা দেয়। থেকে থেকে বাঁধ দিয়ে খাল ভরাট করার ফলে অপর প্রান্তের ভূমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অন্য জনের ভূমিও আঃ ছোবহানের দখলে চলে আসে। আ: ছোবহানের এমন বে-আইনি কর্মকান্ডে পরিবেশদূষণের শিকার হচ্ছে গ্রামবাসীরা। সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিছ কোম্পানী জানান, খালের প্রবাহ রোধ করার ঘটনা সত্য। এই কাজটি তিনি অনেক আগে থেকে করে আসছে। সময় এসেছে এখন আইন প্রয়োগের। এ ব্যপারে কাজী আ: ছোবহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০০৮ সালে লামা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাকে খালে বাঁধ দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এ দিকে লামা ভূমি অফিস সূত্র জানান, এই ধরনের কোনো অনুমতি তারা কখনো দেন নাই, দিতে পারেনওনা। পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান অফিস জানান, এ সব ব্যপারে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও বা এসিল্যান্ড প্রাথমিক অভিযান চালিয়ে মামলা দিলে, সেই মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিবেন। এ বিষয় লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মোস্তফা জাবেদ কায়সার জানান, পরিবেশ ও জনস্বার্থ বিঘ্ন ঘটিয়ে যে কোন কাজই বে-আইনি। স্থানীয়দের অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডলু খালের সঙ্গে সংযোগ করে পুলাং খালের প্রাকৃতিক প্রবাহে স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সবাই। ২০০০ সালে প্রণীত ‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন’ অনুযায়ী নদী, খাল, বিল, দিঘি, ঝরনা বা জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ এলাকা এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে, এমন কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ সেগুলো ভরাট করা যাবে না। আইন অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় খাল-নদী রক্ষা করার কেউ নেই। যে যার ক্ষমতা অনুযায়ী খাল ও নদী ব্যবহার করছে। যাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে, তারা নদী ও খালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। পরিবেশ-প্রতিবেশ কিংবা সমাজের দশজনের ক্ষতির পরোয়া করছে না তারা। এই বে-আইনি কর্মকান্ড রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন রয়েছে।