লামায় পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে অধিকার বঞ্চিত জিঘাংসার শিকার এক শাহ আলমের জীবন গল্প (এপিসোড-১) —-
- আপডেট সময় : ০৮:০১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ ১৮ বার পড়া হয়েছে
কথিত আছে পার্বত্য লামায় প্রথম বাংলাভাষি মানুষের বসতি গ্রাম ইব্রাহীম লিডারপাড়া। ২৯৪ নং দরদরী মৌজাস্থ বর্তমান রুপসিপাড়া ইউনিয়নে প্রবেশ মুখে গ্রামটির অবস্থান। মাতামুহুরী নদীর শাখা নদী লামা খাল ও পোপাখালের মিলনস্থল এই গ্রামেই। এখানে প্রাচীনতম একটি সমাজ রয়েছে। সময় এখন আধুনিক হলেও অতিপুরাতনকে বদলাতে পারেনি লামা ইব্রাহীম লিডারপাড়া সমাজের পঙ্কিলতাকে। সমাজে ঘটে যাওয়া বা চলমান একেকটি ঘটনা জানলে মনে হবে, সমাজটি ডুবে গেছে অনৈতিকতা ও অসামাজিকতার নোংরা আবর্জনার মধ্যে। এখানে স্বার্থের কাছে সকল নৈতিকতা পরাজিত। ভাতৃত্বের বন্ধনকে খান খান করে রেখেছে সম্পদের মোহ। এমন একটি সমাজে সাধারণ কোনো নিরীহ নাগরিকের অবস্থা কী দাঁড়াবে? সে কি কোনোরকম বেঁচে থাকার জন্য কিছু করবে? নাকি অনৈতিক ও অবাঞ্ছিত আচরণে নিজেকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিবে? ঘোটা সমাজ যেখানে অনৈতিক কাজের প্রতি আকৃষ্ট, সেখানে একজন ব্যক্তি বা দু’একটি পরিবার কতক্ষন স্ট্রাগল করেব? অনৈতিকতা, অসততা, বর্বরতা এবং অধার্মিকতা যখন একটি সমাজের সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়, তখন সেই সমাজ শুধু বন্ধ্যা হয়ে যায় না, সমাজটি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস ও চরম বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়। আজকের পর্বে সমাজের প্রথম গল্পটি উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। কোনো ব্যক্তি বিশেষের কাছে যদি এই প্রতিবেদনটি আঘাত মনে হয়, তবে প্রতিবেদক বেশি আঘাত প্রাপ্ত হবো। বিগত শতাব্দিতে লামা খালের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা একটি সমাজের নাম ইব্রাহীম লিডারপাড়া। সমাজে শতাধিক পরিবারের বসবাস। নজীর আহম্মদ নামের একজন বাস করতেন সে গ্রামের সমাজে। ৭০’র দশকের শেষদিকে নজীর আহম্মদ মৃত্যু বরণ করেন। তার ২ স্ত্রী ১২ ছেলে ৪ মেয়ে ছিলো। মরহুম নজীর আহম্মদ’র মোট সম্পত্তির পরিমান হলো ১৮ একর ২৫ শতাংশ। তাঁর (ছোট স্ত্রীর সংসারে) ছোট সন্তান শাহ আলম দুনিয়াতে আসার ২দিন আগে নজীর আহম্মদ মারাযায়। মায়ের আদরে শাহ আলম বেড়ে উঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে শাহ আলম বাড়ির বাহিরে অবস্থান করে। ২০০২ সালে স্থানীয় গুরা মিয়ার সাথে শাহ আলমের সত ভাইদের সাথে ভূমি বিরোধ শুরু হয়। ২০০৬ সালে বাড়িতে গিয়ে সে সহোদরদের কাছে পৈত্রিক সম্পত্তি দাবী করে। এর মধ্যে তার বাবার নামীয় কিছু সম্পত্তি অপরাপর (দুই মায়ের সংসারের) ভাই বোনেরা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে নামজারী করিয়ে নেয়(!)। বিষয়টি নিয়ে শাহ আলম লামা থানায় প্রতারণার অভিযোগ করেন। এই সূত্র ধরে তৎকালীন রুপসিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদে বিচার শালিসি বৈঠক করেন। ওই শালিসি বৈঠকে শাহ আলমের অভিযুক্ত ভাইদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা মিলে গেলে, পরিষদ শাহ আলমের অনুকুলে বিগত ১১ বছরের খাজনা প্রধানসহ পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখলকারী ভাইদের প্রতি আল্টিমেটাম দেয়। এর পর ভাইয়েরা তার প্রতি হিংস্র হয়ে উঠে। কিছুদিন পর দেশে জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময় টানা চল্লিশ দিন ধরে ইউপির সহযোগিতায় ভূমি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌথ বাহিনী মৃত নজীর আহম্মদের সম্পত্তি চিহ্নিত করেন। এর পর আইন-সমাজের সিদ্ধান্ত মেনে দু’পক্ষ পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করার অঙ্গিকারে আবদ্ধ হন।যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় শাহ আলম তার ভূমি অধিকার বুজে নেয়। কিন্তু রাষ্ট সমাজে রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে শাহ আলমকে তার ভাতৃদ্বয় আবারো পৈত্রিক সম্পত্তিচ্যুত করেছেন। চলবে….