হৃদপিন্ডের ভাল্বের চিকিৎসা
- আপডেট সময় : ০১:১০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
আমাদের হৃদপিন্ডে সাধারণত ৪টি ভাল্ব থাকে ২টি উপরের চেম্বারে এবং ২টি নিচের চেম্বারে।
হার্টের ভেতরে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভাল্ব বা কপাটিকা থাকে। এগুলোর মাধ্যমেই মূলত হার্টের ভেতরে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্তের সঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের মিশ্রণ ঠেকানো হয়।
এই হার্টের ভাল্ব কোন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে হৃদপিন্ডের কাজে ব্যাঘাত ঘটে, শরীরে অনেক লক্ষণ প্রকাশ পায়। হার্টের ভাল্ব সমস্যা হয় জন্মগত কারণে, বাতজ্বর বা অন্যান্য কারণে। বৃদ্ধ বয়সেও ভাল্ব চর্বি ও ক্যালসিয়াম জমে এর কার্যকারিতা কমে যায়
★★★ হৃদপিন্ডে (হার্টের) ভাল্ব কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়….
** দ্রুত শ্বাস নেওয়া।
** সহজেই হাঁপিয়ে যাওয়া।
** শ্বাস ধরে রাখতে কষ্টবোধ।
** বুক ধড়ফড় করে। কখনো কখনো হৃদস্পদন দ্রুততর হয়।
** ঘুমাতে অসুবিধা হয়। রোগীর শ্বাসকষ্ট এড়ানো জন্য ঘুমের সময় একাধিক বালিশ ব্যবহার করে মাথা উঁচু রাখে। এতে নিঃশ্বাস নিতে পারে।
এই রকম সমস্যা সাধারণ কাজকর্মে, বা শুয়ে-বসে থাকলেও হতে পারে।
** সাধারণ কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠে ও শরীরে যথেষ্ট শক্তি পায় না৷
** সব সময় দুর্বলতাবোধ হয়।
** মাথা ঝিমঝিম করে। অনেক সময় রোগী কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞানের মতো হয়ে যায়।
** বুকে মাঝেমধ্যে অস্বস্তিবোধ হয়। অনেক সময় চাপচাপ বোধ হয়। অনেক সময় বুকের ভেতরে ভারী লাগে।
** পায়ের গোড়ালি, পায়ের পাতা ও তলপেটে অনেকের পানি জমে। এতে অনেকের শরীরের ওজন দ্রুত বেড়ে যায়।
★★★ হৃদপিন্ড (হার্টের) ভাল্বে কার্যকারিতা নষ্ট হলে কি সমস্যা হয়…..
হার্টের ভাল্বজনিত অসুখের কয়েকটি ধরন আছে। সাধারণত দুটি বড় ভাগে এই ধরনগুলোকে আলাদা করা হয়।
** ভাল্বভুলার স্টেনসিস ও ভাল্বভুলার ইনসাফিসিয়েন্সি। **ভাল্বভুলার স্টেনসিস সমস্যা তখন হয়, যখন ভাল্বগুলো পরিপূর্ণভাবে খুলতে পারে না।
এই কারণে হার্ট ফেইলিওর সহ আরো কিছু হার্টের সমস্যাও হতে পারে।
** ভাল্বভুলার ইনসাফিসিয়েন্সিতে ভাল্ব যথাযথভাবে বন্ধ হতে পারে না। ফলে হার্ট যখন রক্ত পাম্প করে, তখন কিছু রক্ত ভাল্বের ভেতর দিয়ে উল্টোপথে প্রবাহিত হয়। এ জন্য রক্ত পাম্প করতে হৃদপিন্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।
★★★কি কি কারনে হৃদপিন্ডের ( হার্ট) ভাল্ব এর সমস্যা/ নষ্ট হয়ে যায়….
*** হার্টের ভালভের ক্ষতি হয় এমন কিছু কারন এর মধ্যে আছে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, সিফিলিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাওর্টিক অ্যানিওরিসম, কানেকটিভ টিস্যু ডিজিজ ইত্যাদিতে।
** ক্যান্সার, সিস্টেমিক লাপাস ইরাইথ্রোম্যাটোসিস ইত্যাদি কারণেও হার্টের ভাল্ব নষ্ট হতে পারে।
** জন্মগতভাবে যাদের হার্টের ভাল্বএ সমস্যা হয়,
এই সকল রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাওর্টিক ভাল্ব ও পালমোনারি ভাল্ব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত থাকে।
** সাধারণত ভালভে তিনটি পাতার মতো থাকে। কোন কারণে একটি পাতার মতো অংশ না থাকলে বাইকাসপিড অ্যাওর্টিক ভাল্ব সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে ভাল্ব ঠিকভাবে খুলতে বা বন্ধ হতে পারে না। এই সমস্যা সাধারণত জন্মগত কারণে হয়।
** রিউমেটিক ফিভার (বাতজ্বর থেকে), বা ব্যাকটেরিয়ার এনডোকার্ডাইটিস থেকে ভাল্ব নষ্ট হয়।
** রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন, যা গলাব্যথা দিয়ে শুরু হয়। যদি গলাব্যথার চিকিৎসায় যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা না হয়, তাহলে একই ব্যাকটেরিয়া হার্ট ভালভের ক্ষতি করে।
*** ব্যাকটেরিয়াল এনডোকার্ডাইটিস হয় সাধারণত রক্তে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশের মাধ্যমে যখন হার্টের চারপাশে থাকা মাংসপেশিতে প্রদাহ করে সৃষ্টি করে এ জীবাণু হার্টে যেতে পারে, মাড়ির প্রদাহ বা জিনজিভাইটিস থেকে, স্যালাইন প্রয়োগের সময়, অন্যান্য কিছু ইনফেকশন থেকে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হতে পারে।
★★★ হার্টের ভাল্ব কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে এর চিকিৎসা
*** দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত থাকলে বা ভাল্ব জন্মগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সার্জারির মাধ্যমে ভাল্ব রিপেয়ার কিংবা রিপ্লেস বা প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
★★ হার্টের ভাল্বপ্রতিস্থাপন করলে যে নিয়মকানুন মানতে হয়…
*** নিয়মিত চিকিৎসক এর ফলোআপে আসতে হয়।
**** অপারেশন এর পর পানি ১.৫ লিটার (২৪ ঘন্টায়) রোগী খাবে।
*** মেটালিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করলে বাকি জীবন একটা ঔষধ (ওয়ারফেরিন) সহ আরো কয়েকটি ঔষধ সেবন করতে হয়।
*** মেটালিক ভাল্ব প্রতিস্হাপন করলে মাঝে মাঝে রক্তের (পি টি আই এন আর)পরীক্ষা করতে হয়।
*** বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক অথবা অন্য কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়।
*** রোগীকে ওয়ারফেরিন ওষুধ সেবন করতে হয় বলে অনেক ধরনের খাবার পরিহার করতে হয়। যেমনঃ সবুজ শাক, টমেটো ইত্যাদি।
*** যদি টিস্যু টাইপ ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয়, তবে সার্জারির পর তিন মাস ওয়ারফেরিন সেবন করতে হয়।
(চলবে…….)